বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে মহনা খাতুন (২৪) নামে এক প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের সময় পেটের ভেতর সার্জিক্যাল গজ রেখে সেলাই করেছেন এক চিকিৎসক। মহনা খাতুন সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার হরিনাথপুর গ্রামের লিটন মিয়ার স্ত্রী।
এ ঘটনায় বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামী লিটন মিয়া বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। মহনা খাতুন বর্তমানে বগুড়া শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মহনা খাতুনের প্রসবব্যথা উঠলে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই ধুনট হাসপাতাল রোডে অবস্থিত আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে তার সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় মহনা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। এরপর ২১ জুলাই দুপুর ১টায় মহনাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
কিছুদিন পর মহনা পেটে ব্যথা অনুভব করেন। কিন্তু অনেক চিকিৎসা নেওয়ার পরও তিনি সুস্থ হননি। বিষয়টি নিয়ে আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বামী লিটন মিয়া। তখন আব্দুল মোমিন বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
এই অবস্থায় ৪ জানুয়ারি বগুড়া শহরের একটি ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, মহনার পেটের ভেতর সার্জিক্যাল গজ রয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শে শহরের অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশন করে মহনার পেট থেকে সার্জিক্যাল গজ বের করা হয় এবং তাকে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়।
পরবর্তীতে মহনার অপারেশনকৃত স্থানে ইনফেকশন হয়। তখন চিকিৎসকের পরামর্শে ফের বগুড়া শহরের ওই হাসপাতালে ভর্তি করলে ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) তাকে দ্বিতীয় দফায় অপারেশন করা হয়। বর্তমানে মহনা সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনায় লিটন মিয়া বাদী হয়ে আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিন বলেন, “বিষয়টি জানার পর ভুক্তভোগী নারী ও তার পরিবারের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেননি।”
অন্যদিকে, চিকিৎসক ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। কিন্তু প্রসূতির পরিবারের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। যোগাযোগ করলে হয়তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সমাধান করা যেত।”
এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা ধুনট থানার এসআই মোস্তাফিজ আলম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ কাদির বলেন, “এ বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”