বগুড়ার ধুনট উপজেলায় বাড়ি থেকে ২ ফ্রিল্যান্সারকে মাইক্রোবাসযোগে অপহরণের পর পরিবারের কাছ থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে ওই ২ ফ্রিল্যান্সারকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মুক্তিপণ নিয়ে পালানোর সময় মাইক্রোবাসের চালকসহ রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, চাপাইনবাবগঞ্জ সদরের শিবতলা গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহীন মোহাম্মাদ অনু ইসলাম (৩৯), বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার মহেশপাড়া গ্রামের আশরাফ উদ্দিনের ছেলে আরএমপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ (২৮), চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের আরজেদ আলীর ছেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্য বছির আলী (৩১), তেলকুপি গ্রামের গাজলুর রহমানের ছেলে আরএমপি সদস্য মাহাবুব আলম (৩১), বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচি গ্রামের আনারুল আকন্দের ছেলে আরএমপি সদস্য রিপন মিয়া (২৯), রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মতিহার থানার ডাশমারি গ্রামের শাহীন আলীর ছেলে মাইক্রোবাস চালক মেহেদী হাসান (২৫)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের দিঘলকান্দি গ্রামের সেলিম সেখের ছেলে রাব্বী (১৯) ও কোরবান খানের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৪) বাড়িতে বসে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। একই গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে ওহাব আলী (২৮) রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সদস্য পদে চাকুরী করেন।
ডিবির পুলিশ সদস্য ওহাব ওই ২ ফ্রিল্যান্সারকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। ওহাবের পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত ৬ আসামি একটি মাইক্রোবাস নিয়ে রোববার রাত সাড়ে ১১টায় রাব্বীদের বাড়িতে যায়। ওই রাতে রাব্বী ও তার চাচাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। অপহরণকারীরা ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ঘুমন্ত রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে ডেকে তুলে মাইক্রেবাসে উঠায়। এসময় তারা রাব্বীর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও নিয়ে যায়। রাত প্রায় ২ টায় অপহরণকারীরা রাব্বীর পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে রাব্বীর পরিবারের সাথে দরকশাকশির পর নগদ ২লাখ ও বিকাশের মাধ্যমে ১লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে রাব্বী ও জাহাঙ্গীরকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকায় ছেড়ে দিয়ে অপহরণকারীরা মাইক্রোবাস নিয়ে রাজশাহীর দিকে রওনা হয়।
এদিকে রাব্বীর স্বজনরা পুক্তিপণের টাকা দিয়ে অপহরণকারীদের মাইক্রোবাসের পিছনে ধাওয়া দেয় এবং বগুড়া জেলা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করে। এসময় জেলা পুলিশ ও নন্দীগ্রামের কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের সহযোগীতায় বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের শাহজাহানপুর উপজেলার বীরগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মাইক্রাবাসসহ অপহরণকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ২ লাখ টাকা, ১টি ওয়াকিটকি, ১টি হ্যান্ডকাফ ও অপহরণকারীদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় রাব্বীর বাবা সেলিম সেখ বাদি হয়ে সোমবার বিকেল ৪টায় ধুনট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত ৬ জনসহ পুলিশ সদস্য ওহাব আলীকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার পর আসামি ওহাব পলাতক রয়েছে।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল আলম বলেন, সোমবার বিকেল ৫টায় আসামিদের থানা থেকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসমি ওহাবকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।