খাগড়াছড়ির পাহাড়ি অঞ্চলে এখন চলছে উলু ফুল সংগ্রহের মৌসুম। স্থানীয়ভাবে উলু ফুল নামে পরিচিত এই ফুল সমতলের মানুষদের কাছে ঝাড়ু ফুল হিসেবেই বেশি পরিচিত। ঘরদোর পরিষ্কারের জন্য এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যদিও বানিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ হয় না, তবুও এই ফুলের বিশাল বানিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ি অঞ্চলে উলু ফুলের বাজারের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে, যা অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে।
পাহাড়ের ঢালে গজিয়ে ওঠা একধরনের বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ থেকে উলু ফুল পাওয়া যায়। একটি গাছ একবার ফুল দেওয়ার পর মারা গেলেও বর্ষার পরে নতুন করে গাছ জন্মায়। চাকমা ভাষায় একে ‘চড়ন্দরা’ এবং ত্রিপুরা ভাষায় ‘চন্দ্রা’ বলা হয়। প্রতি বছর শীতের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত উলু ফুল সংগ্রহ করা হয়। বর্তমানে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই ফুলের চাহিদা ব্যাপক।
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই ফুল স্থানীয়রা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীরা এগুলো শুকিয়ে আটি তৈরি করেন। ১৮-২০টি ঝাড়ু ফুল দিয়ে একটি আটি তৈরি হয়, যা স্থানীয় বাজারে ৭-৮ টাকায় বিক্রি হয়। পরে শুকিয়ে তা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় এই আটি ১০-১২ টাকায় বিক্রি হয়।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উলু ফুলের বিস্তার লক্ষণীয়। পাহাড়ি দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ফুল সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতি ট্রাকে ১৮-২০ হাজার আটি উলু ফুল পরিবহন করা যায়, যা থেকে ট্রাকপ্রতি ৪০-৪৫ হাজার টাকা লাভ হয়। তবে পথে পথে চাঁদা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, যা ব্যবসার জন্য বাধা তৈরি করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ বাছিরুল আলম জানান, উলু ফুলের বানিজ্যিক চাষাবাদ শুরু করলে বিনা পরিচর্যায় লাভজনক ফসল হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বনবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে খাগড়াছড়ি বনবিভাগ উলু ফুল থেকে ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, পরিকল্পিতভাবে উলু ফুলের চাষাবাদ শুরু করা হলে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। এ খাতে ঋণ সুবিধা বাড়ালে পাহাড়ি অঞ্চলের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।